Breaking News

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’ এ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়। ছবি: ডিএইচ বাদল
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নানা আলোচনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এই কঠিন পরীক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপাতত সন্তোষের জায়গায় আছে বলে ভয়েস অব আমেরিকার একটি জরিপে উঠে এসেছে।ওই জরিপ বলছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে।

যদিও জরিপে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর মাসের শেষের দিকে জরিপটি পরিচালিত হয়।দেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেখানে সমান সংখ্যার নারী এবং পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিল মুসলিম।

উত্তরদাতাদের অর্ধেকের খানিকটা বেশি ছিল ৩৪ বছর বয়সের নিচে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।
জরিপের উত্তরদাতাদের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়। এতে দেখা গেছে, ৬৪.১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। মাত্র ১৫.৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য আগের চেয়ে খারাপ নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং ১৭.৯ শতাংশ মনে করেন পরিস্থিতি আগের মতই আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যে প্রতিশোধপ্রবণতা দেখা যায়, তার বড় এক ধাক্কা গিয়ে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে সনাতনী ধর্মাবলম্বী বা হিন্দুদের উপর।

তবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রশাসন, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থল পাহারা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া জন্য।

আরও পড়ুনঃ আমি তারুণ্যের পক্ষে : মিজানুর রহমান আজহারী
গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, বেশ কিছু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করেছি, সাধারণ মানুষের তরফ থেকে, রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর তরফ থেকে। এর ফলে দেখা গেছে, পরবর্তী এক মাসের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

জরিপের ফলাফলে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম এবং অমুসলিমদের কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ১৩.৯ শতাংশ মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ। অন্যদিকে সংখ্যালঘু উত্তরদাতাদের ৩৩.৯ শতাংশ মনে করেন, তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করছে।

জরিপে দেখা গেছে, মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৬.১ শতাংশ মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। সংখ্যালঘু উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৯.৫ শতাংশও এই ধারণার সঙ্গে একমত।

ঢাকার বাসিন্দা জয়তী সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল, তাদের নেতা–কর্মীদের ছত্রছায়ায় লোকজন হিন্দুদের জমি অল্প দামে কিনেছে বা তাদের বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। এরা এখন আর নাই। তাই একটা স্বস্তি বিরাজ করছে।

আরও পড়ুনঃ এক হাজার এতিমকে খাওয়ানোর শর্তে স্টার কাবাবকে ক্ষমা করলেন সাংবাদিক
ঢাকার বাসিন্দা এবং বেসরকারি সংস্থায় প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত হীরেন পণ্ডিত মনে করছেন, সম্প্রতি গ্রামে-গঞ্জে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে তিনিও শঙ্কার মধ্যেই আছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর দক্ষিণ এশিয়া পরিচাল মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলছেন, কোনো সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য খুব একটা কিছু করে না।

তার মতে, শেখ হাসিনার ‘নিপীড়নমূলক শাসনের’ প্রতি ভারতের সমর্থনও হিন্দুদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং এক্ষেত্রে আগামীতে দিল্লির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সব জায়গাতেই সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে চিন্তিত হওয়া। কিন্তু যেসব গোষ্ঠী ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ঘৃণা এবং সহিংসতা ছড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে বিশেষ করে ভারতের আরও সাবধান হওয়া উচিত।

About Admin

Check Also

নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালেই নিজেই আসামি কামরুল ইসলাম

গত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট কামরুল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.