নগর উন্নয়নের কথা বলে নোটিশ ছাড়াই শত শত ভারতীয় মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে দলটির সমালোচকদের শাস্তি দিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছের বাসিন্দা ও হিসাবরক্ষক শহীদ মালিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে তার একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। দুই বছর ধরে তার বাড়িসহ আরও দুই ডজন বাড়ি ভাঙার বিচারের জন্য স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভারতের রাজধানীতে নগর পরিকল্পনা, আবাসন ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নির্মাণ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি সংস্থা কোনো জরিপ বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ওই বাড়িগুলো ভেঙে ফেলে।
আরও পড়ুনঃ রহস্যজনক আচরণ স্যাটেলাইটের, ভারত মহাসাগর থেকে আমেরিকার দিকে
শহীদ মালিক জনান, তার একটি রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে এবং অন্যটি তার নিজের বাড়ির জন্য। মামলাগুলো এখনও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷ শুনানির দিন ক্রমাগত পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার অভিযোগ উপস্থাপন করার সুযোগও পাননি। তাদের আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?
তিনি আরও জানান, মালিক তার বাড়ির চেয়েও অনেক বেশিকিছু হারিয়েছেন। বাড়িটি ভেঙে ফেলার দুই মাস আগে মালিকের ছেলে জিয়ান কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদেরকে ঠান্ডায় বাইরে ঠেলে দেওয়ার পর তার ছেলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাবা-মা দেখেন, জিয়ানের শরীর নীল হয়ে গেছে, যখন শিশুটির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। যেদিন সন্ধ্যায় ওই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, সেদিন শিশুটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রমাগত কান্নাকাটি করলে, মালিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। পরে ছয় দিন শিশু জিয়ানকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সবশেষ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) নয়াদিল্লিতে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়।
আরও পড়ুনঃ এবার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা
মালিক বলেন, ‘চিকিৎসকরা আমাদের বলেছিলেন, ধুলোর সংস্পর্শে আসায় তার জন্য শ্বাস নেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। যখনই জিয়ানের কথা ভাবি, তখন আমি এবং আমার স্ত্রী ব্যথায় কাঁপতে থাকি। আমাদের কখনোই নোটিশ দেওয়া হয়নি, কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়ি এবং আমাদের ছেলে দুটোই চুরি করেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালিকের মতো শত শত ভারতীয় মুসলমানদের কোনো নোটিশ ছাড়াই, অনেক ক্ষেত্রে আইনি নথি ছাড়া ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায়ই নগর কর্তৃপক্ষ নগর উন্নয়ন, সৌন্দর্যায়ন ড্রাইভ বা ‘অবৈধ দখল’ সাফ করার কথা বলে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে দলটির সমালোচকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার প্রকাশ্যেই এমন ধ্বংসের কথা বলেছেন নেতারা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে বুলডোজার বাবা (ড্যাডি বুলডোজার) উপাধি অর্জন করেছেন। অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বুলডোজার মামা হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।