যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় প্রতিবন্ধী, পঙ্গু, দুস্থ নারী এবং গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য রাখা হুইলচেয়ার, অটোরিকশা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল লুট হয়ে গেছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর বাজারের পাশে পপুলার রাইসমিলের একটি ঘর থেকে এগুলো লুট হয়।
সোমবার বাঘারপাড়া থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, এ ঘটনায় রবিবার রাতে আয়োজকদের পক্ষে গোলাম রসুল নামে একজন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসনে ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে শনিবার দুপুরে পপুলার রাইসমিল চত্বরে ৩৬৭টি হুইলচেয়ার, অটোরিকশা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল প্রতিবন্ধী, পঙ্গু, দুস্থ নারী এবং গরিব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু তার আগে শুক্রবার সকালে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বাধায় বিতরণ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তালা ভেঙে সব হুইলচেয়ার, অটোরিকশা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল লুট করা হয়
আয়োজকরা জানান, হাসনে ইন্টারন্যাশনাল তুরস্কভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বাঘারপাড়ায় অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে কোরবানির গরুর মাংস, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করে আসছে। গত তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার ও অটোরিকশা, দুস্থ নারীদের সেলাইমেশিন এবং দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল দিয়ে আসছে। এ বছর বিতরণের জন্য কয়েক মাস আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সুধিজনদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা নেওয়া হয়। এ বছর উপজেলায় ১৪০ জনকে হুইলচেয়ার, ২০ জনকে আটোরিকশা, ১০৭ নারীকে সেলাইমেশিন এবং ১০০ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেল দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরি করা হয়। এজন্য গত শুক্রবার বিকালে উপজেলার রায়পুর বাজারের পাশে পপুলার রাইস মিল চত্বরে শামিয়ানা টানানো হয়। কিন্তু ছাত্রদলের এক নেতা শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। তিনি শামিয়ানা খুলে না নিলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। পুলিশও অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলে। এ অবস্থায় শুক্রবার রাতেই শামিয়ানা খুলে নেওয়া হয়।
থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, শুক্রবার রাতে সুফলভোগীদের খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। আগে থেকে নির্ধারিত সময় শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবন্ধী, দুস্থ নারী এবং ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। হাসনে ইন্টারন্যাশনালের চিফ অপারেশনস অফিসার কেমাল সারদিস এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইয়াপরাক মেলেক কবির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিমানের ফ্লাইট দেরি হওয়ায় তারা দুপুর ১২টার দিকে বাঘারপাড়ায় পৌঁছান।
অভিযোগ করা হয়েছে, বেলা ১১টার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তিতাস মোল্লা, রায়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বকুল হোসেন এবং রায়পুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন সেখানে আসেন। তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলেন। এরপর আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন খালি হাতে ফিরে ফিরে যান।
অভিযোগকারী পপুলার রাইস মিলের ম্যানেজার গোলাম রসুল জানান, পাঁচ-ছয় দিন আগে ওই হুইলচেয়ার, অটোরিকশা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল আনা হয়। রাইসমিলের একটি বড় ঘরে সেগুলো রেখে তালা দেওয়া অবস্থায় ছিল। শনিবার রাত ১০টার দিকে দেড়শ থেকে দুইশ লোক ওই ঘরের তালা ভেঙে সব হুইলচেয়ার, অটোরিকশা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে গ্রামবাসী ধাওয়া করলে তারা নয়টি অটোরিকশা এবং পাঁচটি বাইসাইকেল ফেলে রেখে যায়।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তিতাস মোল্লা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি দুই দিন ধরে ঢাকায় রয়েছেন। ওই অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে অনুষ্ঠানটি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিপুল ফারাজীর ছিল বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে বিপুল ফারাজী বলেন, ‘এসব সেবামূলক কাজ করে তুরস্কের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মালামালগুলো উপকারভোগীরা পেলে আজ তাদের মুখ চকচক করতো। গরিব মানুষের জন্যে তারা এখানে ৭-৮ বছর ধরে নানামুখী কল্যাণমূলক কাজ করে আসছে। এবার নোংরা রাজনীতির কারণে তাদের সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেল। এটি খুবই দুঃখজনক।’
জানতে চাইলে বাঘারপাড়া থানার ওসি আব্দুল আলিম বলেন, ‘দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের বিতরণের জন্য মালামাল লুটের বিষয়ে গতকাল রাতে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’