জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। যদি তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হয় সেক্ষেত্রে ছাত্ররা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া দিয়েছেন তারা।
রোববার (১০ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়েকরা। শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়ায় সেটির প্রতিবাদে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা।
বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের প্যারেড কর্ণারে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চকবাজার, জামালখান, আন্দরকিল্লাহ, কোতোয়ালী হয়ে নিউমার্কেট গিয়ে শেষে হয়। মিছিল-সমাবেশে হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন।
মিছিলে দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘হাসিনাকে আনবো, ফাঁসিতে ঝুলাবো’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আওয়ামীলীগের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, এ‘কটা দুটা লীগ ধর, ধরে ধরে বস্তা ভর’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রিজাউর রহমান প্রমুখ। এসময় জুলাই আন্দোলনে আহত দুজন শিক্ষার্থীও বক্তব্য রাখেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষের রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদ শক্তিকে পরাজিত করা হয়েছে। পতিত শক্তির সঙ্গে কোনো আপোষ নেই। এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। পতিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইলে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে দেওয়া হবে। শহীদের রক্ত রঞ্জিত জমিতে তাদের দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইলে আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে থেকে কঠোর হস্তে দমন করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরের বাংলার মাটিতে এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে হবে। যদি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবেন ছাত্ররা। আজকে নাকি তারা রাজপথ দখলে নিবে বলেছিল। কিন্তু তাদের রাজপথে খুজে পাওয়া যায়নি। এই স্বৈরাচারের দোসরদের জায়গা বাংলার মাটিতে আর হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ শান্ত, শহীদ ফরহাদ, শহীদ হৃদয় তরুয়া পূর্ণভূমি চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম মাটিতে নওফেলের মতো কুলাঙ্গারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা এখনো রাজপথ ছাড়িনি। রাজপথে থেকে এসব ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিহত করবো। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামীলীগকে চট্টগ্রামের রাজপথে প্রতিহত করেছিলাম। সামনেও তাদের আমরা কড়া জবাব দেবে। স্বৈরাচারের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না।
জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী লাবিব মোরশেদ বলেন, জুলাইয়ের আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে। গুলি করে, অস্ত্র চালিয়েও দাবায় রাখা যায়নি। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ভবিষ্যতেও দাবায়ে রাখা যাবে না। খুনীদের প্রতিহত করতে হবে।