Breaking News

সিপিডির গবেষণা: জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০-১৫ টাকা কমানো সম্ভব

মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। জ্বালানি তেলের দাম কমাতে মূল্য নির্ধারণ কাঠামো সংস্কারের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য : সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানায় সিপিডি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহমেদ।

বিশিষ্ট আলোচক হিসাবে ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদসহ প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন।

স্বাগত বক্তব্যে গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিসির ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তারা বড় মুনাফা করে। এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।

মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে জ্বালানি তেলের মূল্য ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। বিপিসি কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। দাম নিয়ে ভোক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। ২০১৫ সাল থেকে তারা ভর্তুকি পায় না, কেননা তারা মুনাফা করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে ক্ষতি সমন্বয় করে। বিইআরসিকে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব, কর্তৃত্ব বা মূল্য নির্ধারণ মডেল তৈরি করার আইনি কাঠামো দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সিপিডি। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে ভোক্তার মতামত নেবে। এছাড়া বিইআরসির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।

সিপিডি বলছে, প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করতে চাইলে গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরে তা সমন্বয় করা যেতে পারে।

বক্তব্যে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে হলে তেলের চুরি কমাতে হবে। সিস্টেম লসের পরিমাণ কমাতে হবে। তাই তেল বিক্রির কার্যক্রম অটোমেশনের বিকল্প নেই। আমাদের স্টোরেজ ক্ষমতা কম, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে স্টোরেজ বাড়ানোর কাজ চলছে। এতে খরচও কমার পাশাপাশি দামও কমবে।’

বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ডেভেলপমেন্ট করার অনেক জায়গা আছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের তুলনায় প্রিমিয়াম প্রাইজ কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদে যে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে সেখানেও দাম আরও কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইস্যুতে সরকার দ্বিধায় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু (হঠাৎ দাম বৃদ্ধি) হতে পারে, তখন ভোক্তারা বহন করতে পারবে কি না। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আমি জানিয়েছি, তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকার বিইআরসির মাধ্যমেও ভর্তুকি দিতে পারবে। বিইআরসি সহসা এই তেলের দাম নিয়ে কাজ করবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপিসি যে তালিকা (ফর্মুলা) করেছে, সেই তালিকা চূড়ান্ত নয়, অবশ্যই অনেক বিষয় উঠে আসবে। ভোক্তাদের মতামতও নেওয়া হবে।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকার ব্যবসায়ীদের সরকার ছিল, তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের দাম নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। কিন্তু আজকের সরকার কেন হাতে রাখতে চায়, কার স্বার্থে? তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সরকার কার স্বার্থ কাজ করছে। কেন এটা বিইআরসির হাতে ছেড়ে দিচ্ছে না এটা বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, বিপিসি লাভ করে কত! তারা কস্ট প্লাস নয়, ট্রিপল প্লাস মুনাফা করে। বিপিসির কাছ থেকে করপোরেট ট্যাক্স নেয়, আবার ডিভিডেন্ড নেন। রেগুলেটরি কমিশন নিষ্ক্রিয়, হাইকোর্ট বারবার বলেছে নিষ্ক্রিয় থাকা অবৈধ। প্রয়োজন হলে ক্যাব আবার কোর্টে যাবে। কেন এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সংস্কার কমিশন হয় না। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি সংস্কারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার এতদিন পরেও আমরা একটি রিফাইনারি করতে পারিনি। পুরোনো রিফাইনারির (ইআরএল) লাইফ টাইম অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে এখন এটির মাধ্যমে রিফাইন করা তেল আমদানি করা তেলের চেয়ে ব্যয় বেশি পড়ছে। এটা আমরা পাবলিকলি বলি না, কারণ তখন বলা হবে এটা বন্ধ করে দাও।

এসএফ

About Admin

Check Also

ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার

রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মবার বিকেলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.