Breaking News

আতঙ্কে ব্যাংকের ৭৫০০ গ্রাহক, জানা গেল ভয়াবহ তথ্য

হেড লাইন: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পেরে আতঙ্কে ভুগছেন সাড়ে ৭ হাজার গ্রাহক। প্রতিদিন ব্যাংকে গিয়েও টাকা তুলতে পারছেন না তারা। কেউ কেউ একমাস আগে চেক জমা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ টাকা তুলতে না পেরে হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মাস খানেক আগেও গ্রাহকদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে পারলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে এতেও ব্যর্থ হচ্ছে শাখাটি। ফলে শাখাটির সাড়ে ৭ হাজার গ্রাহক তাদের প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি টাকার আমানত নিয়ে শঙ্কা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

সখীপুর উপজেলার কচুয়া এলাকার মর্জিনা আক্তার প্রায় ২০দিন আগে চেক জমা দিয়েছেন। আজ সোমবার বিকেলে এসেও তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেননি। মর্জিনা জানান, অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব থেকে তার স্বামী ৭৭ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। মাঠে পাকা ধান ঝরে যাচ্ছে, কিন্তু টাকার অভাবে শ্রমিক নিতে পারছেন না। টাকা তুলতে না পারলে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অসুস্থ মহিলা গ্রাহক ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢুকে আকুতি-মিনতি করছেন। নিজের অস্ত্রোপচার করাতে লাগবে কমপক্ষে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহককে কৈফিয়ত দিতে দিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। ব্যাংকটির প্রধান শাখা থেকেও কোনো সহযোগিতা ও আশ্বাস পাচ্ছেন না বলে জানান কর্মকর্তারা।

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড সখীপুর শাখায় কয়েকজন গ্রাহক টাকা উত্তোলনের আশায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কেউ পরিচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, আবার কেউ কেউ তর্ক জুড়ে দিয়েছেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এভাবে প্রতিদিন ব্যাংকে গ্রাহকেরা জড়ো হন টাকা উত্তোলনের জন্যে। কিন্তু নগদ টাকার ঘাটতি থাকায় এবং গ্রাহকেরা নতুন করে জমা না দেওয়ায় টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ব্যাংকটির রিয়েল-টাইম গ্রোস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ও ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) বন্ধ থাকার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম বুথেও টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রাহক ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। হুমায়ুন নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক কাজের জন্যে বেশ কিছু টাকা এই ব্যাংকে জমা রয়েছে। গত ১৯ দিন আগে ২০ হাজার টাকার একটি চেক জমা দিয়ে গেয়েছি। এখন পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করতে পারিনি।’ ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড সখীপুর শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সালেক আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকের নগদ টাকা সংকটের কারণে গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এটি শুধু সখীপুরে নয়, দেশের সব শাখারই একই সমস্যা।’ গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সালেক আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের যৌক্তিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান থেকে উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সমাধান দেওয়া সম্ভব না। সমাধানে অবশ্যই সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসতে হবে।’

উল্লেখ্য, অব্যাহত অনিয়ম ও বিধিভঙ্গের কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় পরিচালনা পর্ষদের ঋণ নিয়মাচার ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন বা পুননির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে পরিচালকদের আর্থিক অনিয়ম, পর্ষদের নীতি-নির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতিসহ আরও কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। পরে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ব্যাংকটির আর্থিক লেনদেন আরও লাজুআরও লাজুক হয়ে পড়ে।

সূত্র: Zoombangla

About Admin

Check Also

হাজার বিঘা জমি, তিন দেশে বাড়ি আছে ‘মহারাজ’ নিক্সনের

একসময়ের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.