Breaking News

আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরের সামনে হেনস্তার শিকার হন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেশটি সফরে যান তিনি।

জেনেভায় আসিফ নজরুলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে সরকার। সরকারের গুরত্বপূর্ণ উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টার সঙ্গে প্রটোকল থাকার পরও কেন এমন ঘটনা ঘটল এবং এর সঙ্গে কাদের যোগসাজশ রয়েছে তা জানতে চেয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।সদর দপ্তরের কূটনৈতিক পত্র পাওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যে মাঠে নেমে পড়ে মিশন। ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠিয়েছে জেনেভার বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন। আওয়ামী লীগ আমলে জেনেভা মিশনে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মকর্তা এবং এক লোকাল স্টাফের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে প্রতিবেদন পেয়েছে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মিশনের প্রতিবেদনের আলোকে লেবার কাউন্সেলর (জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস) মুহাম্মদ কামরুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া লোকাল স্টাফ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মচারী মিজানের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছেআর হেনস্তার ঘটনার তিন হোতা সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার আহ্বায়ক খলিলুর রহমানসহ প্রায় সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেনেভায় আসিফ নজরুলকে হেনস্তার পর সম্প্রতি বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জরুরি পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই পরিপত্রে দুটি বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রথমত, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিদেশ সফরকালে যথাযথ প্রটোকল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রদূতসহ মিশনের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

গত ৭ নভেম্বর আসিফ নজরুলকে হেনস্তা করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক আসিফ নজরুলকে ঘিরে ধরেন। তারা তার সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় তর্ক করছেন, বারবার প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি মিথ্যা বলেছেন।’ ভিডিওতে শোনা যায়, আসিফ নজরুল বলছেন, ‘আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?’ তখন হেনস্তাকারীদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে আইন উপদেষ্টার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জেনেভাস্থ বাংলাদেশ মিশন জানতে পারে, আইএলও’র গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রাষ্ট্রীয় সফরে জেনেভা সফরে গেছেন আসিফ নজরুল। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দেশে ফিরছিলেন তিনি। আইন উপদেষ্টা দূতাবাসের প্রটোকল নিয়ে গাড়িতে করে জেনেভা বিমানবন্দরে আসেন। তিনি গাড়ি বিমানবন্দরে নামার পর একদল লোক তাকে ঘিরে ফেলেন। এরপর উপদেষ্টা বিমানবন্দরে প্রবেশের আগ পর্যন্ত হেনস্তাকারীরা তাকে বিরক্ত করেন।

আইন উপদেষ্টাকে যখন হেনস্তা করা হয় সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন লেবার কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম এবং লোকাল স্টাফ মিজান। আসিফ নজরুলকে হেনস্তা করার যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, তার সঙ্গে থাকা কামরুল বা মিজান কেউই প্রতিবাদ কিংবা উপদেষ্টাকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টাও করেনি। এ নিয়ে খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হতবাক হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, তারা কেন কোনো প্রতিবাদ কিংবা উপদেষ্টার নিরাপত্তার দেওয়ার চেষ্টা করেনি সেটি বড় প্রশ্ন।

আইএলও’র গভর্নিং বডির বৈঠকে যোগ দিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়াও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও জেনেভা সফর করেন।

প্রসঙ্গত, আসিফ নজরুল আইন ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

About Admin

Check Also

ছাত্র-জনতার আন্দোলন: ৪ মাস পর নিহত সুমাইয়ার মরদেহ উত্তোলন

দাফনের ৪ মাস পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে নিহত সুমাইয়া আক্তার (২০) এর মরদেহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.